BREAKING NEWS BREAKING NEWS BREAKING NEWS
আনন্দ মুখোপাধ্যায় :: ২৪ ঘন্টা লাইভ :: ১৩ই,মার্চ :: কলকাতা :: সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়া করোনাভাইরাসে এ পর্যন্ত ১ লাখ ২৬ হাজারের বেশি মানুষ আক্রান্ত হয়েছে। এ বৈশ্বিক মহামারিতে এ পর্যন্ত মারা গেছে ৪ হাজার ৫২৪ জন।
বৃহস্পতিবার বার্তা সংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য তুলে ধরা হয়। চীনের বাইরে ১২২টি দেশে ছড়িয়ে পড়েছে করোনাভাইরাস। কিউবা, হন্ডুরাস ও আইভরি কোস্ট আজ প্রথম করোনা ভাইরাস সংক্রমণের কথা জানাল। বুলগেরিয়া, আয়ারল্যান্ড, সুইডেন ও ইন্দোনেশিয়া করোনা ভাইরাসে প্রথম মৃত্যুর ঘটনার কথা জানিয়েছে। আসুন নীচের পরিসংখ্যানগুলো দেখে জেনে নিন কি ঘটছে বিশ্বে করণের তান্ডবে এই মুহূর্তে !! স্বভাবতই প্রশ্ন জাগতে পারে, এই রোগের বিস্তার ইউরোপ-আমেরিকা বা ‘উত্তর গোলার্ধে’ কেন বেশি?
প্রথমত শীতপ্রধান দেশে বাড়ি, অফিস-আদালত, স্কুল-কলেজ, বাস, ট্রেন—সবকিছু ঠান্ডা থেকে রক্ষা পেতে বদ্ধ থাকে। সেই কারণে কোনো ট্রেনে বা বাসে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত যাত্রী থাকলে বাকি সবাই আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি অনেক বেড়ে যায়। দ্বিতীয়ত, পশ্চিমা দেশগুলোয় যদিও জনসংখ্যা তুলনামূলক কম, কিন্তু বয়স্ক মানুষের সংখ্যা বেশি। ইউরোপের প্রায় প্রতিটা দেশেই ৬৫ বছরের ঊর্ধ্বে মানুষের সংখ্যা সেই দেশের মোট জনসংখ্যার ২০ শতাংশের কাছাকাছি। কোভিড-১৯–এ যেহেতু বয়স্ক মানুষ বেশি ঝুঁকিপূর্ণ, সে কারণে গুরুতর রোগীর সংখ্যাও তুলনামূলক বেশি।
এ ক্ষেত্রে তাদের উন্নত স্বাস্থ্যব্যবস্থা খুব কার্যকর হচ্ছে না। অন্যদিকে, আফ্রিকায় জনসংখ্যার ঘনত্ব কম, দরজা–জানালা খোলা-বদ্ধ থাকে না। শীতপ্রধান দেশে বাড়ি, গাড়ি, যানবাহন বদ্ধ থাকে। এ ছাড়া ইউরোপের ভেতরে অবাধ যাতায়াত এবং শুরুতে আক্রান্ত ব্যক্তি শনাক্ত করা এবং কোয়ারেন্টাইনে নেওয়াটা খুব দ্রুত করা হয়তো সম্ভব হয়নি। তবে এই দুটি কাজই জাপান শুরুতে আর দক্ষিণ কোরিয়া একটু দেরিতে দক্ষতার সঙ্গে করতে পেরেছে। উন্নয়নশীল বা দক্ষিণের দেশগুলোর ক্ষেত্রে আমরা লক্ষ করলে দেখব, তারা শুরুতে ১ জন, ২ জন বা ১০ রোগী শনাক্ত করেছে, তারপর আর নতুন পাওয়ার হার খুবই কম। অনেকে যুক্তি দিচ্ছেন, গরমে এই ভাইরাস বাঁচতে পারে না। তা হয়তো হতে পারে। তবে সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, ওমান, কুয়েতে সারা বছর গরম থাকার পরও কোভিড-১৯–এর রোগী পাওয়া যাচ্ছে।
আর গবেষকেরা বলছেন, ৭০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ওপরে তাপমাত্রা গেলেই তবে করোনা ভাইরাস মারা যায়। পৃথিবীর কোনো দেশের তাপমাত্রা ৭০ ডিগ্রি ওঠে না, সুতরাং কোনো দেশের গরম তাপমাত্রায় কোভিড-১৯ হবে না, সে সুযোগটা নেই। এখন রোগী পাওয়া না পাওয়ার যথার্থতা বুঝতে উন্নয়নশীল দেশগুলোকে চীনের মতো অস্বাভাবিক হারে নিউমোনিয়া রোগী বাড়ছে কি না, সেদিকে লক্ষ রাখতে হবে।
মহামারি নিয়ন্ত্রণের বেলায় মূল চ্যালেঞ্জ হচ্ছে যখন খুব দক্ষতার সঙ্গে অল্প রোগীকে চিহ্নিত করা সম্ভব হয়, তখন কোয়ারেন্টাইন কাজ করে। কিন্তু একটা সময় যখন কে আক্রান্ত আর কে আক্রান্ত না, সেটা আর ধরতে পারা সম্ভব হয় না, তখন ইতালির মতো পুরো দেশকে কোয়ারেন্টাইনে নিতে হয়। প্রত্যেককে একে অন্যদের থেকে আলাদা থাকতে হয়, কিন্তু সেটা শেষ উপায়।
সর্বোপরি ডেঙ্গু, কোভিড-১৯–এর মতো অন্যান্য রোগ মোকাবিলার জন্য দরকার তড়িৎ রোগী শনাক্তকরণ এবং দক্ষ মনিটরিং ব্যবস্থা। ডিজিটাল এপিডেমিওলজি বিশ্বে এই মুহূর্তে কোথায় কতজন কোভিড-১৯ রোগী আছে, সেটা যেমন দেখাচ্ছে, তেমনি করোনা বা ডেঙ্গুর মতো পরিস্থিতিতে দেশের ভেতরের পরিস্থিতি ‘প্রকৃত সময়ে’ জানতে এবং করণীয় ঠিক করতে নিজেদের একটা ডিজিটাল এপিডেমিওলজিক্যাল সার্ভেল্যান্স সিস্টেম থাকাটা জরুরি। রোগ এবং রোগী চিহ্নিত করতে আর অবস্থান নির্ণয় করতে চীনের ১১ দিন দেরিতে শুরু করার মাশুলও যে কত বড় হতে পারে,কোভিড-১৯ তার বড় উদাহরণ। আমরা প্রস্তুতি নিতে দেরি করতে চাই না।