রাজীব গুপ্তা :: ২৪ ঘন্টা লাইভ :: ৭ই,মে:: কোলকাতা :: পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভা নির্বাচনে জয়ের পর তৃণমূল কংগ্রেস নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছিলেন দলত্যাগীরা ফিরতে চাইলে তিনি স্বাগত জানাবেন। তবে তৃণমূল কংগ্রেস দলের বিজয়ী বিধায়কদের নিয়ে এক বৈঠকের পর জেলা তৃণমূল সভাপতি অরূপ রায় জানিয়ে দিয়েছেন, তাঁরা চাইছেন না তৃণমূলে দলত্যাগী বিশ্বাসঘাতকেরা ফিরে আসুক। এই দাবি তাঁরা নেত্রী মমতার কাছেও জানাবেন। তৃণমূল কংগ্রেসের অনেক নেতা এখনই দলত্যাগীদের ফিরিয়ে নিতে চাইছেন না। তাঁরা বলছেন, ওরা বিশ্বাসঘাতক, গাদ্দার, বেইমান। ওদের দলে ফিরিয়ে নেওয়া চলবে না।
নির্বাচনের আগে দলবদল করেন রাজ্যের মন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারী, রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়, সাংসদ শিশির অধিকারী থেকে বহু নেতা বিধায়কেরা। কলকাতা করপোরেশনের প্রাক্তন মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়ও দল বদল করে বিজেপিতে যোগ দেন নির্বাচনের আগেই। বিজেপি এবার নির্বাচনে তাঁকে প্রার্থী করলেও তাঁর বান্ধবী বৈশাখী চ্যাটার্জিকে প্রার্থী না করায় শোভন চট্টোপাধ্যায় ক্ষোভে আর প্রার্থী হননি। তবে শোভনের স্ত্রী রত্না চট্টোপাধ্যায় তৃণমূলের টিকিটে দাঁড়িয়ে জয়ী হয়েছেন। রত্না আর শোভনের বিবাহবিচ্ছেদের মামলা চলছে।
শোভনের বান্ধবী বৈশাখী ইঙ্গিত দিয়েছেন তাঁরা আবার তৃণমূলে ফিরতে চাইছেন। দলত্যাগী আরও বেশ কয়েকজন নেতা, মন্ত্রী, সাংসদ, বিধায়ক দলে ফিরে আসতে চাইছেন বলে সংবাদমাধ্যমের খবরে ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে।সংবাদ মাধ্যমের অসর্থিত সূত্রের খবর এবার প্রাক্তন তৃণমূল নেতা ও কৃষ্ণনগর উত্তরের বিজেপি বিধায়ক মুকুল রায় আবার তৃণমূলে ফেরার জন্য উদগ্রীব বলে জানা গেছে । তিনি নাকি তৃণমূল দলের কাছে এমনও প্রস্তাব দিয়েছেন যে তিনি তৃণমূলে যোগ দিলে তাঁর সঙ্গে আরও ১১ জন বিজেপি বিধায়ক ও দুজন বিজেপি সাংসদ ও তৃণমূলে যোগ দেবেন । যদিও এই খবরের সমর্থনে সেভাবে কোনো সত্যতা যাচাই করা যায়নি ।
বিজেপিতে মুকুল রায় যেহেতু পার্লামেন্টারি রাজনীতিতে অনেক অভিজ্ঞ তাই হয়তো ভেবেছিলেন এবারের বিধানসভায় তিনিই হয়তো বিরোধী দলনেতার পদটি পেতে পারেন কিন্তু বাস্তবে চিত্রটা একটু অন্যরকম ।এই পদের জন্য সম্ভবত বিজেপি নেতৃত্ব শুভেন্দু অধিকারীর কথা মাথায় রেখেই এগোচ্ছে তাই বলাযায় এবারও মুকুল রায় কে বিজেপি থেকে নিরাশ হবার সম্ভাবনা আছে । সম্ভবত এই কথাটি মাথায় রেখেই মুকুলবাবু আগামী দিনের দাবার চালটি দিতে চলেছেন ।
হাওড়া জেলার তৃণমূল সভাপতি অরূপ রায় বলেছেন, হাওড়া থেকে রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়, পৌরসভার প্রাক্তন মেয়র রথীন চক্রবর্তী, বৈশালী ডালমিয়ারা যোগ দিয়েছিলেন বিজেপিতে। কিন্তু তাঁরা কেউ জিততে পারেননি। তাই এই সব বিশ্বাসঘাতকদের দলে ফিরিয়ে নিতে চাইছেন না হাওড়া জেলা তৃণমূলের নেতারা।এখানেও অসমর্থিত সূত্রের খবর রাজীব বন্দোপাধ্যায় এবং বৈশালী ডালমিয়া নিজের নিজের মতো করে নাকি আবার তৃণমূলে ফেরার চেষ্টা করছেন ।
বিজেপির সামনে এখন নতুন চ্যালেঞ্জ। বিজেপির নেতারা দাবি তুলেছেন, তাঁদের বিধায়কেরা দলেই আছেন। দলেই থাকবেন। বিজেপিতে থেকে তাঁরা রাজ্যের উন্নয়নে ব্রতী হবেন। তৃণমূলের অপশাসনের বিরুদ্ধে আন্দোলন জোরদার করবেন।
২০১৬ সালের পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভায় ২৯৪টি আসনের মধ্যে বিজেপি পেয়েছিল মাত্র ৩টি আসন। এবার সেই সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ৭৭। আবার ২০১৯ সালের সর্বশেষ লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি জিতেছিল ১৮টি আসনে। তৃণমূল ২২টি আসনে আর কংগ্রেস জিতেছিল ২টি আসনে।
ওই বছর এই লোকসভা নির্বাচনের নিরিখে বিজেপি এগিয়ে ছিল ১২১টি বিধানসভা আসনে আর তৃণমূল এগিয়েছিল ১৬৪টি আসনে। কংগ্রেস এগিয়েছিল মাত্র ৯টি আসনে।
এবারের বিধানসভা নির্বাচন সব হিসাব পাল্টে দিয়েছে। বিধানসভা নির্বাচনের নিরিখে বিজেপি এবার লোকসভার ৪২ আসনের মধ্যে এগিয়ে রয়েছে মাত্র ৯টি আসনে। আর বাকি ৩৩টি আসনে এগিয়ে আছে তৃণমূল। অথচ লোকসভার ৪২ আসনের মধ্যে এখনো বিজেপির রয়েছে ১৮ আসন।