আনন্দ মুখোপাধ্যায় :: ২৪ ঘন্টা লাইভ :: ৭ই,সেপ্টেম্বর :: কোলকাতা :: জাতীয় তদন্তকারী সংস্থা এনআইএ-এর তলব পেয়ে হকচকিত হয়েছেন কলকাতার বিজ্ঞানী, ‘ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ সায়েন্স এডুকেশন অ্যান্ড রিসার্চ’-এর অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর, বিশিষ্ট ভাইরোলজিস্ট পার্থসারথি রায়। বেশ কয়েকজন কবি, অধ্যাপক, সাংবাদিক, সমাজকর্মী এর আগে অভিযুক্ত হয়েছেন যে ভীমা কোরেগাঁও ষড়যন্ত্র মামলায়, সাম্প্রদায়িক সংঘর্ষে প্ররোচনা দেয়ার দায়ে, সেই মামলাতে জড়িয়ে গিয়েছে তার নাম।
১০ সেপ্টেম্বর মুম্বাইয়ে এনআইএ-এর দফতরে গিয়ে জেরার মুখোমুখি হতে হবে তাকে। অথচ ২০১৮ সালে মহারাষ্ট্রের ওই হাঙ্গামার ঘটনার ধারেকাছে ছিলেন না তিনি। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের অনেকেরই বক্তব্য, এ নেহাতই তাঁকে ‘ফাঁসানো’র চেষ্টা।
পার্থসারথি রায় জানিয়েছেন, ‘একটা জেনারেল প্রসেস চলছে, যেখানে ইন্টেলেকচুয়াল, অ্যাকাডেমিশিয়ান, অ্যাক্টিভিস্ট— সকলকে হ্যারাস করে জেলে ঢোকানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। সরকারের কোনোরকম বিরোধিতা করলেই এটা করা হচ্ছে। এই সরকার করোনার মোকাবিলা করতে পারছে না। একজন বিজ্ঞানী হিসেবে তা বলেছিলাম। আমি আগে যা বলেছিলাম, পরবর্তীকালে তা মিলে গেছে। লকডাউনের পরে যে সংক্রমণ বাড়বে, সে কথাই আমি বলেছিলাম।’
পার্থসারথি রায়ের বক্তব্য, তিনি স্রেফ সরকারের সমালোচনা করার জন্য সমালোচনা করেননি। বরং তার বদলে কী করতে হবে, সেটাও বলে ছিলেন। অর্থাৎ তার সমালোচনা ছিল গঠনমূলক। যারা ভারতে বিজ্ঞানচর্চার খোঁজখবর রাখেন, তারা বলছেন, মহামারি নিয়ে সরকারকে পরামর্শ দেয়ার যোগ্যতা অবশ্যই তার আছে। এ বিষয়ে তার জ্ঞান আন্তর্জাতিক স্তরে স্বীকৃত। আইআইএসইআর-এ ভাইরোলজি নিয়ে গবেষণায় তার উল্লেখযোগ্য অবদান আছে। ‘নেচার’-এর মতো পত্রিকায় এ বিষয়ে তার মতামত গুরুত্ব দিয়ে ছাপা হয়।
কোভিড ১৯ ভাইরাসের মতিগতি বুঝতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা সারা বিশ্বের যে বিজ্ঞানীদের সঙ্গে কথা বলেছে, পার্থ তাদের অন্যতম। কিন্তু সে সব অগ্রাহ্য করে তার সমালোচনা করার ‘ধৃষ্টতা’ই বেশি গুরুত্বপূর্ণ মনে হয়েছে কেন্দ্রীয় সরকারের। তাই তাকে ডেকে পাঠানো হয়েছে মুম্বাইয়ে। ভীমা কোরেগাঁও মামলায় আর যে সমস্ত বিশিষ্টজনকে জেলে পাঠানো হয়েছে, তাদের সকলের বিরুদ্ধেই দেশদ্রোহের আইনে মামলা করা হয়েছে।
পার্থসারথিকে এনআইএ-এর তলব প্রসঙ্গে পশ্চিমবঙ্গে গণতান্ত্রিক অধিকার রক্ষা আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত রঞ্জিত শূর বলছেন, বুদ্ধিজীবীদের বিরুদ্ধে কোনো কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থার এই ধরনের ‘অতি-সক্রিয়তা’ পশ্চিমবঙ্গে সাম্প্রতিক অতীতে দেখা যায়নি। কিন্তু ড. রায়ের বিরুদ্ধে এই পদক্ষেপের একটা কারণ সম্ভবত শুধু কোভিড লকডাউন নিয়ে সরকারের সমালোচনা নয়, নানা প্রসঙ্গেই অতীতে সরকারের বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন তিনি। এটা তারই প্রতিক্রিয়া বলে অনেকে মনে করছেন। তাদের ধারণা, পশ্চিমবঙ্গে ভোট যত কাছে আসবে, ততই এই ধরনের ঘটনা বাড়বে।
রঞ্জিত শূরের কথায়, ‘সামনে পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভা নির্বাচন। বিজেপি বা হিন্দুত্ববাদী সংগঠনগুলো বেশ কয়েকবার পশ্চিমবঙ্গের বুদ্ধিজীবীদের কাছে গেছে। কিন্তু বিশেষ সুবিধা মেলেনি। তাই এ বার এজেন্সিকে ব্যবহার করে তাদের মুখ বন্ধ করার চেষ্টা করা হচ্ছে।’
এনআইএ-এর মুম্বাইয়ের দফতরে হাজিরা দেওয়ার ডাক পড়েছে পার্থসারথির। এই করোনা পরিস্থিতিতে তিনি কীভাবে কলকাতা থেকে মুম্বাই যাবেন, সেটাই একটা বড় প্রশ্ন। আইনি সাহায্যও নিচ্ছেন তিনি। অন্যদিকে অনেক বিজ্ঞানী ও বুদ্ধিজীবী তার এই হেনস্থার প্রতিবাদে সরব হয়েছেন। এপিডিআর বিক্ষোভ জমায়েত এবং রাজ্যপালের কাছে স্মারকলিপি পাঠানোর কর্মসূচি নিয়েছে। কিন্তু সরকার আদৌ তাতে কর্ণপাত করে কি না, সেটাই এখন বড় প্রশ্ন। পাশাপাশি পশ্চিমবঙ্গ সরকার এ বিষয়ে নীরব কেন, সে প্রশ্নও উঠছে কোনো কোনো মহলে।