মার্কিনপ্রবাসী ভারতীয় বংশোদ্ভূত তরুণ ডাক্তার অঙ্কিত ভরত এর দেখানো পথেই চেন্নাইয়ের হাসপাতালে দু’টি ফুসফুস একসঙ্গে প্রতিস্থাপন !

0
293

২৪ ঘন্টা লাইভ নিউজ ব্যুরো :: ২৯ শে আগস্ট :: কোলকাতা :: কিছুদিন আগেই দুনিয়ার নজর কেড়ে নিয়েছিলেন মার্কিনপ্রবাসী তরুণ ভারতীয় বংশোদ্ভূত ডাক্তার অঙ্কিত ভরত। করোনা সংকটের এই সময়ে নামজাদা চিকিত্‍‌সকেরা যখন জটিল অস্ত্রোপচারে পিছিয়ে যাচ্ছিলেন, তখন অঙ্কিত ভরত এগিয়ে আসেন। তাঁর নেতৃত্বে একটি চিকিত্‍‌সক দল সফল ভাবে শিকাগোর বছর ২০-র এক তরুণীর শরীরে সফল ভাবে দু’টি ফুসফুস একসঙ্গে প্রতিস্থাপন করে। চিকিত্‍‌সার পরিভাষায় যাকে বলা হয়, বাইল্যাটেরাল লাং ট্রান্সপ্লান্ট ।

এই ঘটনা নিয়ে সংবাদ মাধ্যম “এই সময় ” একটি বিস্তারিত প্রতিবেদন পেশ করেছে । ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে করোনার কামড়ে ওই তরুণীর ফুসফুস এতটাই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল, অবিলম্বে প্রতিস্থাপন না-করলে প্রাণহানির আশঙ্কা ছিল। সেই অবস্থায় চ্যালেঞ্জটা নিয়েছিলেন ভারতীয় বংশোদ্ভূত ওই ডাক্তার। আমেরিকার চিকিৎসাবিজ্ঞানের ইতিহাসে এমন অস্ত্রোপচার বিরল।

অস্ত্রোপচারের পর শিকাগো নর্থওয়েস্টার্ন লাং ট্রান্সপ্লান্ট প্রোগ্রামের থোরাসিক সার্জারি অ্যান্ড সার্জিক্যাল ডিরেক্টর অঙ্কিতের প্রতিক্রিয়া ছিল, ‘এখনও পর্যন্ত জীবনে যত প্রতিস্থাপন করেছি, তার মধ্যে এটি ছিল অন্যতম কঠিন। তবে, এ বার থেকে কোভিড আক্রান্তদের মধ্যে যাঁদের অবস্থা আশঙ্কাজনক, তাঁদের ক্ষেত্রে এ ধরনের অস্ত্রোপচারের সংখ্যা বাড়া উচিত।’

প্রায় দু-মাসের ব্যবধানে এ বার ফুসফুসের সেই জটিল অস্ত্রোপচার সফল ভাবে সম্পন্ন হল ভারতে। চেন্নাইয়ে যাঁর শরীরে দু’টি ফুসফুস একসঙ্গে প্রতিস্থাপন করা হল, তিনিও কোভিড রোগী। করোনাভাইরাসের সংক্রমণে মার্কিন ওই তরুণীর মতো তাঁরও ফুসফুস বিকল হয়ে গিয়েছিল। এই সংকট সময়ে এশিয়ায় আর কোথাও, আর কোনও হাসপাতালে, কোনও কোভিড রোগীর শরীরে ফুসফুসের এই জটিল অস্ত্রোপচার হয়নি। সেদিক থেকে এশিয়ার প্রথম দেশ হিসেবে কোভিড রোগীর শরীরে

ফুসফুস প্রতিস্থাপন করে এই দৃষ্টান্ত স্থাপন করল ভারত। চেন্নাইয়ের মাল্টি স্পেশ্যালিটি হাসপাতাল এমজিএম হেলথকেয়ারের সৌজন্য ভারতের মুকুটে সাফল্যের এই ঝলমলে পালক জুড়ল। এই মাল্টি স্পেশ্যালিটি হাসপাতালের চিকিত্‍‌সকেরাই অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে বাইল্যাটেরাল লাং ট্রান্সপ্লান্ট সম্পন্ন করেছেন। তবে, এই এমজিএম হেলথকেয়ারে ফুসফুসের এই অস্ত্রোপচার প্রথম নয়। কোভিড লকডাউনের মধ্যে এটি দ্বিতীয় অস্ত্রোপচার। তবে, এর আগের জন কোভিড রোগী ছিলেন না।

DR  BALAKRISHNAN

এমজিএম হেলথ কেয়ারের কার্ডিয়াক সায়েন্সেসের ডিরেক্টর ও চেয়ারম্যান এবং হার্ট অ্যান্ড লাং ট্রান্সপ্লান্ট প্রোগ্রামের ডিরেক্টর ডাক্তার কেআর বালাকৃষ্ণনের নেতৃত্বে একটি চিকিত্‍‌সক দল এই অস্ত্রোপচার করে। ডাক্তার সুরেশ রাও, ডাক্তার শ্রীনাথ, ডাক্তার অপর জিন্দলের মতো বিশেষজ্ঞরা ছিলেন এই টিমে।

হাসপাতাল সূত্রে খবর, দিল্লির বাসিন্দা ৪৮ বছর বয়সি এক ব্যক্তির শরীরে এই অস্ত্রোপচার হয়েছে। কোভিডের কারণে ওই ব্যক্তির ফুসফুসে মারাত্মক সংক্রমণ হয়েছিল। যার জেরে ফুসফুসের ভয়ানক ক্ষতি হয়। জানা যায়, ৮ জুন কোভিড সংক্রমণ ধরা পড়ার পর থেকেই তিনি হাসপাতালে। দু’টি ফুসফুসের সফল প্রতিস্থাপনের পর চিকিত্‍‌সকেরা জানান, করোনা আক্রান্ত ওই ব্যক্তির দু’টি ফুসফুসের সামান্য অংশ কাজ করছিল। শ্বাস নিতে পারছিলেন না বলে, শরীরে অক্সিজেনের মাত্রা কমে আসছিল। ২০ জুন থেকে ভেন্টিলেটর সাপোর্টে রাখতে হয়।

তাঁর শারীরিক অবস্থার ক্রমাগত অবনতি হতে থাকায় ২০ জুলাই গাজিয়াবাদ থেকে এয়ারলিফট করে MGM Healthcare আনা হয়। ভেন্টিলেটর সাপোর্টে কাজ না-হওয়ায়, ২৫ অগস্ট পর্যন্ত, প্রায় একমাস ECMO সাপোর্টে রাখা হয়। তাতেও অবস্থার উন্নতি হয়নি।

ডাক্তার বালাকৃষ্ণন জানান, ওই অবস্থায় তাঁদের কাছে রোগীকে রেফার করা হলে, শুরুতে তাঁরা দ্বিধাগ্রস্ত ছিলেন। কিন্তু, শেষ পর্যন্ত সব দ্বিধা কাটিয়ে অস্ত্রোপচারের সিদ্ধান্ত নেন। নিজেদের শরীরে করোনা সংক্রমণের ঝুঁকির কথা গুরুত্ব না দিয়ে, তাঁর চ্যালেঞ্জটা নেন। তিনি জানান, প্রতিস্থাপন করা ফুসফুস ভালো রকম কাজ করছে। অস্ত্রোপচারের চ্যালেঞ্জটা নেওয়ার জন্য টিমের সকলকে তিনি ধন্যবাদ দেন। এই টিমের আর এক চিকিত্‍‌সক সুরেশ রাও জানান, দু’টি ফুসফুস কাজ করায় ECMO সাপোর্ট সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। রোগীর ক্লিনিক্যাল অবস্থা এখন স্থিতিশীল।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here