নিজস্ব সংবাদদাতা :: ২৪ ঘণ্টা লাইভ :: ১৭ ফেব্রুয়ারি :: কলকাতা:: নবাব বন্দি হয়ে এসেছিলেন এই শহরে। বহু লাঞ্ছনার মাঝে এই শহরকে আপন করে নিয়েছিলেন। মেটিয়াবুরুজকে বানিয়ে দিয়েছিলেন ছোট লখনউ। মৃত্যুর পর নবাবের ঐতিহ্য ক্রমে মুছে গিয়েছে। শহরে প্রথম পদার্পনের প্রমান অমিল। এগিয়ে এসে নবাবকে শহরের বিশেষ স্বীকৃতি শহরের ইতিহাস প্রেমীদের। উন্মোচিত হল মেটিয়াবূরুজের নবাবের স্মৃতি-বিজড়িত ঐতিহাসিক বিচালীঘাটে স্মৃতিফলক। সৌজন্যে পুরোনো কলকাতার গল্প গ্ৰুপ।
৭ ফেব্রুয়ারি, ১৮৫৬। অউধের পতনের সঙ্গে ভারতের শেষ নবাবের নবাবী শেষ হয় ব্রিটিশ রাজশক্তির হাতে। ১১ মার্চ, ১৮৫৬ বিপর্যস্ত ও হতাশ নবাব একবুক আশা নিয়ে রাজধানী লখনৌ ছাড়েন। কলকাতায় কোম্পানির কাউন্সিলের কাছে আপীল করেন, হৃতসম্মান ও রাজ্যপাট যদি পুনরুদ্ধার করা যায়। লাভ হয়নি।
বুকে অনেক কষ্ট অভিমান নিয়ে লখনৌ ছাড়েন। জেনারেল ম্যকলয়েড স্টীমারের ডেকে দাড়িয়ে পড়ন্ত সূর্যের আলোয় শিল্প সাহিত্য প্রেমী ওয়াজেদ আলি শাহ গেয়ে উঠেছিলন ” যব ছোড় চলে লক্ষ্নৌ নগরী…..”, চোখের জলে ভিজে যাচ্ছে তার বাদশাহী আচকান। স্তম্ভিত হয়ে তার মহিষী, দাসদাসী সহ আড়াইশো লোকলস্কর শুনছে, নবাব গাইছেন, ” বাবুল মোরা নাইহার ছুট যায়ে…..” কানপুর, এলাহাবাদ ও বারানসী হয়ে এই দীর্ঘ নদীভ্রমন শেষ করে রীতিমতো কাহিল নবাব এসে নোঙর করেন শহর কলকাতার অখ্যাত ঘাট বিচালীঘাটে।
ঘটনা ৬মে ১৮৫৬র। তারপর হুগলী দিয়ে অনেক জল বয়ে গিয়েছে। নবাবের সাধের গোমতীতে সাংস্কৃতিক সান্ধ্যবিহার করার যখন আর কোনও পথ খোলা রইল না, তখন তিনি কিভাবে ধীরে ধীরে গঙ্গা তীরবর্তী এই মেটিয়াবূরুজ বা মিটিয়াবুরজকে মিনি লখনৌ গড়ে তুললেন তার প্রিয় খাদ্যাভাস, সঙ্গীত, নাটক ও ধ্রুপদী নাচ দিয়ে সে ইতিহাস দীর্ঘ তিন দশকের।
কেউ কথা রাখেনি। ক্রমে দেশ স্বাধীন হয়েছে। আরও হারিয়ে গিয়েছে নবাবের ইতিহাস। হারিয়ে গিয়েছে মেটিয়াবুরুজের লখনৌ হয়ে ওঠার ইতিহাস। পুরোনো কলকাতার গল্পের উদ্যোগে বিস্মৃত মেটিয়াবূরুজের সেই ঐতিহাসিক অধ্যায়ের ফলক উন্মোচন করা হয়।
চট্টোপাধ্যায়ের কথায়, ‘বাংলা ও ইংরেজি এই দুই ভাষায় দুটি ধাতব ফলক বসানো হয়েছে ঐতিহাসিক বিচালিঘাটে। ১৮৫৬ সালে ব্রিটিশ চক্রান্তে রাজ্যপাট হারিয়ে সুদূর লক্ষনৌ থেকে নদীপথে এই ঘাট ধরেই নবাবের কলকাতায় পদার্পণ। দিনটি ছিল ১৮৫৬ সালের ১৩ই মে। এই ফলক বসানোর ক্ষত্রে রাজ্য হেরিটেজ কমিশনের দ্বারস্থ হয় “পুরনো কলকাতার গল্প”র সদস্যরা। আমরা নবাবী ইতিহাসের বিভিন্ন তথ্য ঘেঁটে, ঐতিহ্য পদযাত্রার মাধ্যমে এবং কলকাতায় নবাবের বংশধরদের সহায়তায় গুরুত্বপূর্ণ নথিসহ কমিশনের কাছে আবেদন করি আজ থেকে প্রায় ৬ মাস আগে। নথির মধ্যে নবাবের কলকাতা আগমনের অনুপূর্বিক তথ্য এবং কলকাতার কৃষ্টি-সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য সৃষ্টির ক্ষত্রে নবাবের ভূমিকার কথা তুলে ধরি। এক্ষেত্রে নবাব ওয়াজেদ আলি শাহ’র বংশোদ্ভূত জনাব শাহেনশা মির্জাও বিশেষ উদ্যোগী হ’ন।’
এদিনের এই অনুষ্ঠানের আহ্বায়ক ছিলেন নবাব ওয়াজেদ আলী শাহের গ্রেট গ্র্যান্ডসন শাহেনশাহ মির্জা, ওয়েষ্টবেঙ্গল হেরিটেজ কমিশন অফিসার ওন স্পেশাল ডিউটি বসুদেব মল্লিক এবং স্থানীয় কাউন্সিলর আখতারী শাহাজাদার পুত্র ও স্থানীয় ঐতিহ্যের অনুসারী সাদিক সাহাজাদা ও নবাব পরিবারের বর্তমান সদস্য।
অনুষ্ঠান পর্ব শেষে সদস্যরা শ্রদ্ধা জ্ঞাপন যান নবাব ওয়াজেদ আলি শাহের শেষ শয্যা স্থলে। তাঁর সমাধিস্থল সিবতানাবাদ ইমামবাড়ায়।