নরেশ ভকত :: ২৪ঘন্টা লাইভ :: ১০ই,অক্টবর :: বাঁকুড়া :: সময় বদলেছে, সভ্যতায় লেগেছে আধুনিকতার ছোঁয়া, তবে আজো প্রাচীন রীতি মেনে স্বমহিমায় আজও পূজিত হন মা মহিষমর্দিনী দেবী দুর্গা। বাঁকুড়া পাত্রসায়ের ব্লকের হাজরা জমিদার বাড়ির দুর্গাপুজো এলাকার সবথেকে প্রাচীন পূজো বলেই জানাযায়। ইতিহাসের সূত্র থেকে জানাযায়, এক সময় বর্ধমান রাজার সঙ্গে বিষ্ণুপুর মল্ল রাজার সীমানা অতিক্রম করে খাজনা আদায় করা নিয়ে প্রায়ই সংঘর্ষ লেগে থাকত। আর পাত্রসায়ের ছিল বিষ্ণুপুর এবং বর্ধমান রাজ সীমানার একেবারে শেষ অংশ।
সে কারণেই তৎকালীন অবিভক্ত বাংলাদেশ ময়মনসিংহ জেলার নিবাসী কাঞ্জিলাল চক্রবর্তীকে বিষ্ণুপুর মল্লরাজ সেনাধ্যক্ষ হিসাবে নিযুক্ত করেন । পাত্রসায়ের এলাকার প্রায় কয়েশো বছর আগে হাজার একর জমি দিয়ে তাদের জমিদারিত্ব পত্তন করেন । আর এই হাজার একর জমির মালিকানা হিসেবেই চক্রবর্তী থেকে তাদের পদবী পরিবর্তন হয়ে উপাধি পান হাজরা ।
বংশের আদি পুরুষ কাঞ্জিলাল এর চার সন্তান । এদের মধ্যে এক মাত্র বড় ছেলে ছিলেন চার সন্তানের পিতা। তবে অন্য তিন ছেলেরা নিঃসন্তান ছিলেন । বংশানুক্রমে জমিদারি কিভাবে চলবে এই নিয়ে সেনাধ্যক্ষ কাঞ্জিলাল শোকহত ছিলেন । কাঞ্জিলালের বড়ছেলের তৃতীয় সন্তান হরিপদ ঘোড়ায় চড়ে একদিন খাজনা আদায় করতে গিয়েছিলেন তৎকালীন জঙ্গলাকীর্ন রাস্তায় ফিরে আসার দিকভষ্ট হয়ে পথ হারিয়ে ফেলেন ।
স্থানীয় রঙ্কিনী পুষ্করিণীর জল পান করে একটি গাছের নিচে বিশ্রাম নিচ্ছিলেন । সেই সময় মা দুর্গা বালিকা রূপে রঙ্কিনী পুষ্করিণী থেকে উঠে এসে তাকে পথ দেখিয়ে দেন । এরপর এই অলৌকিক ঘটনার কথা জানিয়ে মেজো ছেলে হরিপদ বিষ্ণুপুর মল্ল রাজা কে একটি চিঠি লেখেন । সেই থেকেই বিষ্ণুপুর রাজের অর্থানুকূল্যে শুরু হয় মা মহামায়া পুজো । প্রতিষ্ঠি হয় মন্দিরের ।
তারপর থেকেই সেই সাড়ে চারশো বছর ধরেই রীতিনীতি মেনে হয়ে আসছে হাজরাবাড়ী মা দুর্গার আরাধনা । জমিদার বাড়ির পুজোর রীতিনীতি অন্যান্য সার্বজনীন পূজা থেকে কিছুটা আলাদা । এই জমিদার বাড়িতে একচালা মন্দিরে মহিষমর্দিনী দেবীর প্রতিমা হয়। এখানে পূজো হয় বৃহৎ নন্দিকা পুরান মতে। নিয়ম-নীতি মেনে আদিকাল থেকেই অষ্টমীর দিন হয় বলির আয়োজন ।
তবে এবারের করোনার পরিস্থিতি সরকারি নির্দেশ মেনে মুখে মাক্স স্যানিটাইজার সামাজিক দূরত্ব বিধি মেনেই করা হবে পুজো । ফুল বেলপাতা নিজের নিজের বাড়ি থেকে এনে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে দেওয়া হবে পুষ্পাঞ্জলী । জাকজমকে ভাটা পড়লেও কিছুটা মন খারাপ এর মধ্যেই এবছও রীতিনীতি মেনে পূজার্চনা হবে নিষ্ঠার সঙ্গে বলেই জানিয়েছে জমিদার পরিবারের সদস্যদের ।