রত্নাকে শোভনের বিধানসভার দেখভালের দ্বায়িত্ব দিলেন পার্থ – পুর ভোটার আগে শোভন বৈশাখীকে পেতে মরিয়া বিজেপি ।

0
541

নিজস্ব সংবাদদাতা :: ২৪ ঘন্টা লাইভ :: ৯ই,মার্চ :: কলকাতা :: দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক (সংগঠন) বি এল সন্তোষের উপস্থিতিতে রবিবার কলকাতায় খুব বড় সাংগঠনিক বৈঠক সেরেছে রাজ্য বিজেপি। সেই বৈঠকে এ দিন শোভন চট্টোপাধ্যায়কেও ডাকা হয়েছিল বলে জানা গিয়েছে। কিন্তু ২০১৯-এর ২০ অগস্টের পর থেকে এ পর্যন্ত বিজেপির কোনও মঞ্চেই যেমন শোভনকে দেখা যায়নি, তেমন এ দিনের বৈঠকেও তিনি গরহাজিরই ছিলেন। ২০১৯-এর অক্টোবরে এবং ২০২০-র মার্চে কলকাতায় অমিত শাহের কর্মসূচিতে ডাক পেয়েও শোভন যখন হাজির হননি, তখন এ দিনের সাংগঠনিক বৈঠকে যোগ দেবেন, এমন আশা বিজেপি নেতৃত্বেরও খুব একটা ছিল না। কিন্তু তার পরেও শোভনকে যে ডাকা হল এ দিনের বৈঠকে, গত দু’দিনে যে বিজেপি নেতৃত্বের তরফ থেকে বার বার যোগাযোগ করা হল শোভন-বৈশাখীর সঙ্গে, তা বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। এখনও যে শোভন চট্টোপাধ্যায়ের বিষয়ে বিজেপি হাল ছেড়ে দেয়নি, সেটাই স্পষ্ট হচ্ছে বলে বিশ্লেষকদের মত।

শোভন চট্টোপাধ্যায় তৃণমূল ছাড়ার পর থেকে তাঁর (১৩১) ওয়ার্ডে রত্নার গুরুত্ব যে ভাবে বাড়ানো হচ্ছিল, তাতে তাঁর পক্ষে তৃণমূলে ফেরা যে আর সম্ভব নয়, সে ইঙ্গিত কলকাতার প্রাক্তন মেয়র নানা ভাবে দিচ্ছিলেন। কিন্তু তৃণমূল নেতৃত্ব সে সব কথায় যে কান দেননি, তা পুরভোটের মুখে এসে আরও স্পষ্ট হয়ে গেল। শুধু ১৩১ নম্বর ওয়ার্ডের দায়িত্ব নয়, শোভন যে আসনের বিধায়ক, সেই বেহালা পূর্ব বিধানসভা আসনের পর্যবেক্ষক নিযুক্ত করে রত্নাকে এ বার আরও বড় দায়িত্ব তৃণমূল দিয়ে দিল। পুরভোটে যে রত্না প্রার্থী হচ্ছেন, তা-ও প্রায় নিশ্চিত।

শোভন ঘনিষ্ঠরা বলছেন— এর চেয়ে স্পষ্ট কোনও বার্তা আর হয় না। যাঁকে নিয়ে শোভনের মূল আপত্তি, তাঁর গুরুত্ব ক্রমশ বাড়িয়ে তোলা এবং শোভনের ওয়ার্ড বা শোভনের বিধানসভা আসনের দায়িত্বই সে হাতে তুলে দেওয়া আসলে বলে বলে শোভনকে চ্যালেঞ্জ ছোড়ার শামিল— মনে করছে শোভন ঘনিষ্ঠরা ।

প্রাক্তন মেয়রের ‘কাছের লোক’ হিসেবে পরিচিত কয়েক জন জানাচ্ছেন, বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে সুসম্পর্ক বহাল রেখে চললেও তাঁর সমস্যাগুলো সমাধানের জন্য পার্থ কিছুই করেননি। পার্থ সব কিছুই ‘ঝুলিয়ে’ রাখছিলেন বলে তাঁদের দাবি। মিল্লি আল-আমিন কলেজে যে সমস্যা চলছে, বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়কে সেখানে যে ভাবে ‘কাজে বাধা’ দেওয়ার অভিযোগ উঠছে, তা মেটানোর কোনও চেষ্টা পার্থ করেননি বলে শোভন শিবিরের দাবি। বৈশাখী একাধিক বার ইস্তফা দেওয়া সত্ত্বেও পার্থ তা গ্রহণ করেননি, সে কথা ঠিক। কিন্তু পার্থ যদি সত্যিই সমস্যাগুলোর সমাধান করতে চাইতেন, তা হলে এত দিন সেগুলো কিছুতেই জিইয়ে থাকতে পারত না বলে শোভন ও বৈশাখী মনে করছেন।

বিজেপি-ও কিন্তু পরিস্থিতি বুঝে তৎপরতা বাড়িয়েছে বলে খবর। টানাপড়েন যতই চলুক, শোভন বা বৈশাখীর সঙ্গে যোগাযোগটা সম্পূর্ণ বন্ধ বিজেপি কখনওই করেনি। পুরভোটের কাছাকাছি এসে যোগাযোগ বাড়ানো হচ্ছিল। শোভনের নির্বাচনী ক্ষেত্রের দায়িত্ব রত্নার হাতে তৃণমূল তুলে দেওয়ার পরে প্রাক্তন মেয়রের শিবিরে উষ্মা কতটা বাড়বে, তা আঁচ করে নিতেও বিজেপি নেতাদের ভুল হয়নি। তাই শনিবার থেকে বিজেপির কেন্দ্রীয় ও রাজ্য নেতারা দফায় দফায় শোভন-বৈশাখীর সঙ্গে যোগাযোগ করতে শুরু করেন বলে খবর। ‘ভুল বোঝাবুঝি’ কিছু থাকলে মিটিয়ে নেওয়া যেতেই পারে, এমন বার্তাও শোভন শিবিরে পৌঁছয় বিজেপির রাজ্য নেতৃত্বের শীর্ষ স্তর থেকে।

বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায় এ দিন আর নস্যাৎ করতে চাননি শোভনের সক্রিয় হয়ে ওঠার সম্ভাবনা। একাধিক বিজেপি নেতা যে সোমবার তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন, তা বৈশাখী মেনে নিয়েছেন। তবে কী কথা হল, সে প্রশ্নের স্পষ্ট জবাব কৌশলে এড়িয়েছেন। সহাস্য উত্তরে বলেছেন, ‘‘অনেক দলের অনেক নেতার সঙ্গেই তো আলাপ-পরিচয় রয়েছে। আজ আন্তর্জাতিক নারী দিবসে তাঁদের অনেকে তো শুভেচ্ছা জানানোর জন্যও ফোন করে থাকতে পারেন।’’

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here