নিজস্ব সংবাদদাতা :: ২৪ ঘণ্টা লাইভ :: ২ফেব্রুয়ারি ::পূর্ব মেদিনীপুর:: গ্রামবাংলা এমনকি শহরাঞ্চলে পানকে খিলি করে খাওয়ার প্রচলন রয়েছে। কিন্তু এবার সেই পান মিলবে শুকনো গুঁড়ো করা অবস্থাতেও। যার মধ্যে নেই কোনও তামাকজাত দ্রব্য। স্বাস্থ্যের পক্ষে ক্ষতির থেকে বরং স্বাস্থ্যের পক্ষে এই পান অনেকাংশেই উপকারী। আর এই অভিনব শুকনো পান আবিস্কারের পথ দেখালেন পূর্ব মেদিনীপুর জেলার মহিষাদলের দনিপুরের বাসিন্দা হরিপদ দোলই।
হরিপদ দোলইের দেখানো পথকে অনুসরণ করে এখন উপকার পাচ্ছেন বয়স্ক বৃদ্ধ-বৃদ্ধারাও।
জানা গিয়েছে, গত প্রায় ১০ থেকে ১৫ বছর আগে হরিপদ দোলই দার্জিলিঙে বেড়াতে গিয়েছিলেন। সেখানে তিনি গাছ থেকে চা পাতা তুলে প্রক্রিয়াকরণের দৃশ্য নিজের চোখে দেখেছিলেন। যা থেকে তাঁর মাথায় আসে অনুরূপভাবে পানকেও শুকনো করে প্রক্রিয়াকরণের ভাবনা। যারফলে বয়স্ক বৃদ্ধ- বৃদ্ধারা অনেকাংশে সুবিধা পাবেন।
এরপর বাড়ি ফিরে পানকে প্রক্রিয়াকরণের ভাবনায় লেগে পড়েন তিনি। কাউকে কিছু না বলেই তিনি নিজেই এই পানকে নিয়ে গবেষণা করতে শুরু করেন। গ্রাম বাংলার ফেলে দেওয়া নষ্ট পানকে তিনি সংগ্রহ করতে থাকেন। এবং সেই পানকে নিয়ে গবেষণা করতে থাকেন। এরমধ্যে ২০১০ সালে তিনি কিছুটা এই গবেষণায় সাড়া পান। তাঁর গবেষনা চলাকালীন পাশে পেয়েছেন বন্ধু প্রসেনজিৎ মাইতিকেও। দুইজন মিলে চালাতে থাকে এই গবেষণা। দীর্ঘদিন গবেষণার পর অবশেষে ২০১৫ সাল থেকে ক্রমে ক্রমে সাফল্য পেতে শুরু করেন তিনি।
জানা গিয়েছে, প্রথমে তাঁর বাড়িতে বিদ্যুতের কোনও ব্যবস্থা ছিল না। ২০১৫ সালে বাড়িতে বিদ্যুতের ব্যবস্থা হওয়ায় পানকে গুঁড়ো করার কাজে বিদ্যুতের সাহায্যে নেন তিনি। এমনকি গুঁড়ো পান তৈরির জন্য নিজেই আবিষ্কার করে ফেলেন এক যন্ত্রের। এই যন্ত্রকে কাজে লাগিয়ে হরিপদ দোলই শেষমেষ আবিষ্কার করে ফেলেন গুঁড়ো পানের। এরপর তিনিই ওই গুঁড়ো পানকে জেলাহর্টিকালচার অফিসারের কাছে নিয়ে যান। তিনিও এই পান খেয়ে তাঁর তারিফ করেন। এবং তিনি হরিপদ দোলইকে পরামর্শ দেন তাঁর এই গুঁড়ো পানকে নিয়ে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষা করানোর জন্য।
পরামর্শমতো তিনি ওই গুঁড়ো পানকে পুষ্টির মান পরীক্ষার জন্য যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় পাঠান। সেখানে পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর তাঁর পান কেমিক্যালমুক্ত ও পুষ্টিসমৃদ্ধ পানের স্বীকৃতি পায় এবং এই গুঁড়ো পান পরে ফেসাই(fssai) থেকেও স্বীকৃতি পায়। হরিপদ দোলইয়ের এইরুপ সাফল্যে আনন্দে আত্মহারা পরিবার থেকে শুরু করে এলাকার লোকজনেরা। তাঁর এই কাজে অনুপ্রাণিত হয়ে এখন তাঁর সঙ্গে গুঁড়ো পান তৈরির কাজে যুক্ত এলাকার প্রায় ১০ থেকে ২০ জন যুবক-যুবতী।
তবে কেমন করে এই গুঁড়ো পান তৈরি হয়? তার উত্তর পাওয়া গেল খোদ হরিপদ দোলইয়ের বাড়িতে গিয়ে। মহিষাদল থেকে দনিপুরের অটো ধরে প্রথমে দনিপুর বাজার এবং এরপর হরিপদ দোলইয়ের বাড়ি। তাঁর বাড়িতে গিয়ে প্রশ্নের উত্তরে পাওয়া গেল, প্রথমে পান বোরোজ থেকে কাঁচা পান সংগ্রহ করতে হয়। এরপর ওই কাঁচাপানকে ভালোকরে রোদে শুকনো করে তাঁর আবিষ্কৃত মেশিনে ঢোকানো হয়। সেখানে ওই পান প্রায় আধঘণ্টা থাকার পর তা গুঁড়ো করা হয়। গুঁড়ো হওয়ার পর পানের মধ্যে মেশানো হয় এলাচ,পানমৌরি, যষ্ঠীমধু সহ নানা উপকরণ। এরপরে ওই পান প্যাকেটজাত হয়ে বাজারে বিক্রি করা হয়। জানা গিয়েছে, তাঁর এই পানের ছোটো প্যাকেটের মূল্য ৫টাকা। এবং বড় ৫০ গ্রাম কৌটোর দাম ৫০টাকা। শুধু তাই নয়, তাঁর এই আবিষ্কার করা গুঁড়ো পান খেয়ে এখন ব্যাপক উপকার পাচ্ছেন বয়স্ক বৃদ্ধ-বৃদ্ধারাও।
হরিপদ দোলইয়ের এই কর্মযজ্ঞে ব্যাপকভাবে সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে সমাজের সকল মহলে সাড়া পেয়েছেন বলে মত স্বয়ং তাঁর। তিনি জানান,”প্রথমে আমি গুঁড়ো পান নিয়ে তেমন কোনো কারুর কাছ থেকে সাড়া পাইনি। কিন্তু পানের স্বাদ মুখে লাগার পর এখন সমাজের সকল মহলেই ব্যাপকভাবে সাফল্য পাচ্ছি।”
সবমিলিয়ে হরিপদবাবুর এই পান এই সর্বজনস্বীকৃত বলাই চলে।