আনন্দ মুখোপাধ্যায় :: ২৪ ঘন্টা লাইভ :: ৮ই,নভেম্বর :: কলকাতা :: আমেরিকা প্রথম’—এমনটাই বিশ্বাস করতেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। আন্তর্জাতিক সব চুক্তিকে তুড়ি মেরে উড়িয়ে দিয়েছিলেন তিনি। তাঁর এই নীতি ছিল একতরফা, ব্যক্তিগত। বিশ্বনেতাদের সঙ্গে নিজের সম্পর্কের ভিত্তিতেই ছিল তাঁর পররাষ্ট্রনীতি।নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন যুক্তরাষ্ট্রকে প্রথাগত পররাষ্ট্রনীতিতেই ফিরিয়ে আনবেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে আন্তর্জাতিক সংস্থা ও পশ্চিমা ডেমোক্র্যাটদের মূল্যবোধের ভিত্তিতেই পথ চলবেন তিনি।
বিবিসির বিশ্লেষণে জানা যায়, বাইডেনের পররাষ্ট্রনীতিতে গুরুত্ব পাবে জলবায়ু পরিবর্তন ও কোভিড-১৯ মোকাবিলার মতো বিষয়গুলো। আন্তর্জাতিক সহযোগিতা ও সমন্বয়ের দিকে থাকবে তাঁর মূল নজর। বাইডেন ন্যাটো ও বিশ্ব জোটের সঙ্গে সম্পর্ক রক্ষায় বিশ্বাসী। ফিরে যেতে চান বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থায়। অন্যদিকে, ট্রাম্প এ সবকিছু থেকে মুখ ফিরিয়ে একা চলার নীতি নিয়েছিলেন।
বাইডেন যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষতিগ্রস্ত ভাবমূর্তিকে পুনরুদ্ধার করতে চান। একনায়কতন্ত্রের বিপরীতে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে চান।জলবায়ু পরিবর্তন ইস্যুতে মোটেও বিশ্বাস করতেন না ট্রাম্প। জো বাইডেন বলেছেন, তিনি জলবায়ু পরিবর্তনকে গুরুত্ব দেবেন। প্যারিস জলবায়ু চুক্তিতে যোগ দেবেন। ট্রাম্প যেখানে জলবায়ু পরিবর্তনকে অর্থনীতির জন্য হুমকি মনে করতেন, সেখানে বাইডেন এটিকে যথেষ্ট গুরুত্ব দেন। তিনি দূষণ কমাতে ২ ট্রিলিয়ন ডলারের কর্মসূচি পরিকল্পনা করেছেন।
ভারতের সঙ্গে বাইডেনের সম্পর্কের কথা ভাবতে গেলে প্রথমেই উঠে আসে “H1B” ভিসার কথা। ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ নীতিকে সামনে রেখে কড়া ভিসা নীতি এনেছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। আর তার ফলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত ভারতের তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থার কর্মীরা। এই পরিস্থিতিতে বাইডেন এলে ভিসা নীতি কিছুটা শিথিল হবে বলেই আশাবাদী সংশ্লিষ্ট মহল । কিন্তু সেখানেও একটা আশঙ্কা থাকছে। করোনা পরিস্থিতিতে ভেঙে পড়া অর্থনীতিকে মজবুত করতে আমেরিকানদের চাকরির বিষয়টিকে প্রাধান্য দিয়েছেন ট্রাম্প, যা জনমানসে বেশ ইতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। এই পরিস্থিতিতে বাইডেন ভিসা নীতি শিথিল করে অভিবাসীদের কাজের পথ কতটা প্রশস্ত করবেন, প্রশ্ন থাকছেই।
দ্বিতীয় বিষয়টি অবশ্যই চিন। ওবামার ভাইস-প্রেসিডেন্ট হিসেবে কাজ করা বাইডেন চিনের ব্যাপারে আরও কার্যকর নীতি নেবেন বলেই মনে করা হচ্ছে। ট্রাম্প চিনের সঙ্গে বাণিজ্যযুদ্ধে জড়ালেও জিনজিয়াং প্রদেশে উইঘুরদের উপর আক্রমণ, হংকং ও তাইওয়ানে চিনের নীতি নিয়ে একটি শব্দও খরচ করেননি। উল্টোদিকে বাইডেন বরাবরই চিনের এই নীতির ঘোর সমালোচক। সেক্ষেত্রে শুধু বাণিজ্যিক নিষেধাজ্ঞা নয়, কূটনৈতিক ক্ষেত্রেও চিনকে বাইডেন চাপে রাখবেন বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। আর চিনের সঙ্গে আমেরিকার সম্পর্ক যত খারাপ হয়, ভারতের সঙ্গে আমেরিকার সম্পর্কে লাভ ঠিক ততটাই।
কিন্তু, সেখানেও একটা আশঙ্কার জায়গা থাকছে। লাদাখ সীমান্তে আগ্রাসন থেকে শুরু করে নানা বিষয়ে ট্রাম্প ভারতকে সোচ্চার সমর্থন ও চিনের বিরোধিতা করেছেন। কিন্তু অভিজ্ঞ রাজনীতিক বাইডেন এ ব্যাপারে অনেকটাই ভারসাম্যের নীতি নেবেন বলে ধারণা বিশেষজ্ঞদের। সেক্ষেত্রে চিন প্রশ্নে মার্কিনি সরকারের ঘোষিত সমর্থন ভারত পাবে কি না, থাকছে সংশয়।